ধীরে ধীরে ফেরে সে। সন্ধে নেমে আসার সময়ের আবছায়ার মতো। প্রিয় হাতটি ছেড়ে যাওয়ার আগে কলঙ্ক মাখিয়ে যায়, সে এখন জানে। পুরুষ তাকে বারবার বহুগামী বলেছে ছেড়ে যাওয়ার অজুহাতে। সে ফিরতে গিয়ে বোঝে ঘর তার পিছনে পিছনে ঘুরেছে এতকাল, ঠাঁইটুকু খুঁজে পায়নি সে। তবু সে ফেরে, আত্মস্থ হয়। ঘুমের ওপারের ডাক উপেক্ষা করে সে। ওসব জোলো ঠাট্টা সে নিজের সঙ্গে করেছে এর আগে। প্রতিটি বিফল আত্মহত্যা তাকে আরেকবার নিজের সামনে দাঁড় করিয়েছে। চিনিয়েছে স্থানুতা, নিজের ভিতরে সমাহিত হওয়া। সে আজকাল নিজের কাছেই ফেরে। হেরেও ফেরে, জিতেও ফেরে। আলোর বিপরীতে দাঁড়িয়ে খুলে দেয় চুল আর উড়ন্ত চুলের ছায়ায় আগুনের শিখা আঁকে। সে জানে স্মৃতি হল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয়ের নাম, সে বিচ্ছিন্নতা অভ্যাস করে, ঘুম দিয়ে ঘর বানায়, আর তার নিশ্চিন্তপুরে ঘুমিয়ে পড়ে। একলা হয়ে যাওয়ার ভয়, তাকে বরাবর মেরেছে, মেরে রেখেছে। একটা জীবন শুধু অন্যের পছন্দ, অন্যের ভালোলাগা দিয়ে মুড়ে সকলের সঙ্গে ঠাঁই পাওয়ার নিরাপত্তা খুঁজেছে। আজ মেয়ে একা থাকলে হাসে, গান গায়, আকাশও দেখে, মেঘ দেখলে কাজল পরে, সরস্বতী পুজোয় হলুদ ফুল গোঁজে খোঁপায়। কারও মনোরঞ্জনের দায় নেই তার। অথচ অনন্ত এক প্রেম তাকে জীবন আর মাটির মাঝখানে বেঁধে রেখেছে।
সে জানে হাত বাড়াতে গেলে ডান হাত দিয়ে নিজের বাঁ হাতটিই খুঁজে নিতে হয়, বাজারে একটি অচল আধুলিও পড়ে পাওয়া যায় না।
মেয়ে ফেরে। নিজের চোখের তারায় প্রাণ ঢালে, অচেনা, বিপুলা এই জগতের প্রতিটি প্রাণকণায় লিখে দেয় তার নাম। পিছনে পড়ে থাকে ‘চরিত্র’ নামের একটি বাজপড়া গাছ, যে বহুদিন ধরে মৃত বলে ঘোষিত।
আজকাল পুরোনো কফিশপের অভ্যস্ত চেয়ারটিতে বসে পাশে একটা ফাঁকা চেয়ার দেখতে তার মন কেমন করে না, আশ্বস্ত হয়। একে যদি ‘ফেরা’ না বলে কতটা বিপুল আয়োজনে গৃহপ্রবেশ করবে মানুষ? অভিধানে ‘মানুষ’ এর অর্থে কোনদিন মানবীর কথা লেখা নেই, আজও, আশ্চর্য!
মানুষ অর্থে মানবীর কথা লেখা নাই বা থাকল। মানবী নিজেই লিখবে সেকথা।
খুব ভালো লাগল৷মানুষ আমরা৷নারীত্ব তো প্রাকৃৃৃৃৃতিক ব্যাপার৷ মানবী আজ মানবিকতার দাবী তুলেছে৷দেবী হতে চাই না৷ মানুষের অধিকার চাই৷
তার আর কোন দায় নেই, নিজের কাছে ফেরা ছাড়া।
সেই! অভিধান এ নতুন শব্দ যোগ করার সময় এসেছে। ভালো লাগলো পড়ে।
নিজের পথ নিজেই তৈরী করবে মানবী। নিজের জীবনশৈলীও।
ভীষণ সুন্দর লেখা।