এই গল্পে একজন রাজপুত্রের বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু রাজপুত্রের কোন রাজকন্যাকেই পছন্দ হচ্ছিল না। কারণ তার মতে, কারোর চোখ ট্যারা, কেউ মোটা, কেউ রোগা, কেউ লম্বা, কেউ বেঁটে, কারোর হাতে লোম আছে। এই গল্পটি পড়লে আমাদের মনে হবে যে মেয়েদের একমাত্র গুণ হল তাদের সৌন্দর্য। আর তাদের মধ্যে যদি কেউ একটু বেশি লম্বা, বেঁটে, রোগা, মোটা হয় তাহলে তাদের বাতিল করা হবে বিয়ের বাজারে। এসব দেখে মনে হয়, বিয়ে না, যেন বাজার থেকে বেছে বেছে জিনিস কেনা হচ্ছে। আর মনে হয়, যেন বিয়ে করা ছাড়া জীবনে মেয়েদের আর কাজ নেই। আবার এখানে মেয়েদের পাত্র পছন্দ করার কিন্তু কোন ব্যাপারই নেই। কেউ তাদের পছন্দ করলেই যেন তারা বেঁচে যায়। এর মধ্যে আবার একজনের হাতের লোম আছে, তাই সে বাতিল হয়েছে। লোম ছেলে-মেয়ে সবার হাতেই থাকে। কারণ আমরা স্তন্যপায়ী প্রাণী, আর স্তন্যপায়ীদের গায়ে লোম থাকে। কারোর একটু বেশি লোম থাকে, কারোর একটু কম। তোমরাই বল, রাজপুত্রের হাতে কি লোম নেই? এইভাবেই ছোটবেলা থেকে রূপকথার গল্প মেয়েদের শিক্ষা দেয় যে মেয়েদের শরীরের লোম থাকা উচিত নয়। যাদের গায়ে তা থাকে, তারা নাকি সুন্দর নয়। মেয়েরা ছোট থেকে এইসব দেখে শুনে বড় হয়। বড় হয়ে পার্লারে গিয়ে কষ্ট পেতে পেতে ওয়্যাক্সিং করায়।
যাইহোক, গল্পে ফিরি৷ তারপর একদিন এক ঝড়বৃষ্টির রাতে একজন সুন্দরী রাজকন্যা সেই রাজকুমারের রাজপ্রাসাদের সামনে হাজির হয়। সে বলে যে সে এক ছোট্ট রাজ্য থেকে এসেছে। সে তার বন্ধুদের সাথে গল্প করছিল। তার মধ্যে ঝড়-বৃষ্টিতে সে তার বন্ধুদের থেকে নাকি আলাদা হয়ে গেছে। প্রহরীরা তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। রানিমা আর রাজামশাই তাকে দেখেন। তাদের সেই রাজকন্যাকে খুব পছন্দ হয়। কিন্তু তাঁরা সেটি মুখে প্রকাশ করলেন না।
রানিমা মনে মনে ভাবলেন যে এই রাজকন্যাকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তারপর তিনি একটা ঘরে গিয়ে সেই ঘরের সোনার পালঙ্কের উপর একটা মটরশুঁটির দানা রেখে দিলেন। তার ওপর রানিমা বাইশটা গদি পেতে দিলেন। আর সেখানেই রাজকন্যাকে সারা রাত শুতে বললেন। আসলে এটি ছিল একটি পরীক্ষা। এই রাজকন্যা কি আদৌ এদেশের রাজপুত্রের বউ হওয়ার উপযুক্ত? তারই পরীক্ষা এসব। কিন্তু কী রকম পরীক্ষা?
রাজকন্যা সেই বাইশটি গদি পাতা বিছানায় ঘুমোতেই পারল না। কারণ সেই মটরশুঁটির দানা নাকি তাকে কষ্ট দিতে লাগল। আমি তো ভেবে পেলাম না বাইশটা গদির চাপ বেচারা মটরশুঁটি সহ্য করল কী করে? কিন্তু রাজকন্যা নাকি এতই কোমল, এতই দুর্বল যে সেই মটরশুঁটি তাকে আঘাত করছিল। এটাই ছিল পরীক্ষা৷ কেমন মেয়েকে রাজবাড়ির বউ হিসেবে চাওয়া হবে? যে এতটাই নরম যে, বাইশটি গদির নিচে থাকা একটা ছোট মটরশুঁটিও তাকে আঘাত করে। আমি বুঝতে পারলাম না, এত দুর্বল মেয়েকে কেন চাইবে কেউ? এই গল্প পড়ে মেয়েরা কী শিখবে? এটাই শিখবে যে বড় হয়ে তাদের শক্তপোক্ত হলে চলবে না? তাহলে তার বিয়ে হবে না? যে যত নরম, সে তত উপযুক্ত মেয়ে? হাসব না কাঁদব?
গল্পে তারপর সকাল হলো। সকাল হলে রানিমা রাজকন্যাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন ঘুম হল সারা রাত?” রাজকন্যা বলল, “আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি।” সেই শুনে রানিমা হাসলেন। তিনি খুব খুশি। বললেন, “তুমি আমার ছেলের স্ত্রী হওয়ার যোগ্য।” আর তারপর তাদের বিয়ে হয়ে গেল।
এসব কী যে হল, কিছুই বুঝলাম না৷ মেয়েরা কেউ খেলাধুলো করে। কেউ ক্যারাটে শেখে। কেউ সাইকেল চালায়। কেন তারা এরকম কোমল-নরম হতে যাবে? এইসব কারণে গল্পটি পড়ে আমার বড়ই খারাপ লাগল। আমাদের চাই অন্যরকম রূপকথা। যেমন, আমার তো এর থেকে নবনীতা দেবসেনের রূপকথা সমগ্রের গল্প বেশি ভালো লাগে। সেই সব গল্পের কথা আরেকদিন বলব। আরও অনেক নতুন নতুন রূপকথা আমাদের লিখতে হবে।
খুব সুন্দর হয়েছে আঁখি।
Khub khub bhalo
খুব সুন্দর হয়েছে আঁখি।
লেখার ভঙ্গিও খুব ভাল।
লেখাটার অপেক্ষায় ছিলাম। দারুণ হয়েছে। এইরকমের আরো, আরো লেখার অপেক্ষায় থাকবো।
চমৎকার লেখা
অনেক বড় হও আঁখি। অনেক অনেক ভালোবাসা তোমার জন্য।
চমৎকার লেখা আঁখি।💚
আরে এটা আ্ঁখি লিখেছিস! একদম ঠিক লিখেছিস। কালকে খবরের কাগজে কুস্তিতে সোনা জেতা মেয়ে ফোগতের পেশীগুলো দেখছিলাম। ওইরকম পেশী না থাকলে কুস্তিতে সোনা জিতবে কি করে? আমাদের সাঁওতাল মেয়েরা কালো, কি বলিষ্ঠ, সুন্দর দেখতে!
ছোটবেলায় রাজকুমারীদের বিয়ে নিয়ে অবসেসড হয়ে গিয়ে আমরা অনেকে জীবনের দিগন্তে একটা ভালো বিয়ে আর একটা ভালো চাকরি শুধু দেখেছি। সেই ভুল যেন এই বাচ্চা মেয়েগুলো না করে। আঁখি! খুব ঠিক কথা বুঝেছ!
চমৎকার লিখেছো দিদিভাই। আর একদম ঠিক তোমার ভাবনা। আমাদের চাই অন্যরকম রূপকথা! তোমার কাছে আগামী দিনে আরও লেখা পড়াবার দাবী রইলো।
Darun likhecho Sohojiya! Notun roopkatha rochona korte hobe! Tumi, ami, amra mile korbo!