দমন, নিয়ন্ত্রণ, সামরিক দখলদারি, প্রোপাগান্ডার মতো জটিল ও যন্ত্রণাদায়ক বিষয়গুলো কী করে ব্যাখ্যা করা যায় একটি শিশুকে? এই ব্যক্তিগত গদ্যে নিসার ধর্মা, সংঘর্ষপ্রবণ এলাকায় বড় হওয়া সন্তানের বাবা হিসেবে এই চ্যালেঞ্জ-এর কথা তুলে ধরেছেন। গদ্যটি দ্য পোলিস প্রজেক্ট ই-জার্নাল ১৬ এপ্রিল ২০২১-এ প্রকাশিত হয়। মূল লেখাটি পড়া যাবে এখানে। নিসার ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে সাংবাদিকতা করেন।
ফেব্রুয়ারির হাড় হিম করা ঠান্ডা পেরিয়ে যেই হালকা রোদ বেরিয়েছে, একদিন আইশাহ আর আমি হেলতে দুলতে বেরিয়ে পড়লাম আমাদের শ্রীনগরের বাড়ি থেকে। আইশাহ-র রঙ পেন্সিল কিনতে। আমার ন’বছরটি অবশ্য একসাথে হাঁটতে বেরোতে খুবই ভালবাসে। ওর প্রিয় ষ্টেশনারি দোকানও আমাদের বাড়ি থেকে মাত্র একশো মিটার মতো দূরে।
দোকানে যেতে একটা ব্রিজ পেরোতে হয়। সেই ব্রিজটা এর আগেও কয়েকশো বার আইশাহ পেরিয়েছে তার স্কুল যাওয়ার পথে। ২০১৯-এর আগস্টে হুট করে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে অবধি। সেই মাসেই ভারত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ছিনিয়ে নিয়ে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভেঙ্গে কাশ্মীরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল বহু মাস।
ব্রিজের উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাজিয়ে রাখা পেঁচানো কাঁটাতার আর ধাতব ব্যারিকেডের কাছে এলেই আইশাহ আমার হাতটা আরো শক্ত করে ধরে ফেলে।
আমরা এই ব্যারিকেডের গোলকধাঁধার মধ্যে দিয়ে তাড়াতাড়ি হাঁটি। ব্রিজের শেষে রয়েছে তিনটি বড় বাঙ্কার।
“বাবা এগুলো কী?” আইশাহ জানতে চায়।
“বাঙ্কার”। আমি ইতস্তত ভাবে উচ্চারণ করি। সেই শব্দ- যেটা হয়তো সুযোগ থাকলে আমাদের সব্বার মিলিত স্মৃতি থেকেই এক্কেবারে মুছে দিতাম।
আমাদের ঠিক সামনেই একটা বড় বাঙ্কার, যেখানে প্রায় ডজন খানেক সেনা থাকতে পারে। আমাদের ডান দিকে, আরেকটা ছোট বাঙ্কার যার সামনে একটা বুলেটপ্রুফ ধাতব বাক্স। এই বাক্সটাতে সারাক্ষণ একজন সেনা দাঁড়িয়ে থাকে, মাঝের ছোট্ট ফাঁকটায় চোখ রেখে আলতো করে নিজের একে-ফর্টি-সেভেনের নল তাক করে।
আমাদের বাঁ দিকে আরেকটা বাঙ্কার। প্রথমটার মতোই বড়। বিবিধ রকমের প্রজেক্টাইল এড়াতে একটা রুক্ষ জাল দিয়ে ঢাকা।
“ওরা কারা? ওরা কী করে?” আইশাহ প্রশ্ন করে, এক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ধরা সেপাইয়ের দিকে আঙ্গুল তুলে। সেপাইটি নজরে রাখে আমাদের, আমরাও দৃষ্টি আকর্ষণ না করতে চেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিই।
“সিআরপিএফ-ওয়ালারা”। আমি যত সংক্ষেপে সম্ভব উত্তর দিই।
“কিন্তু ওরা এখানে কেন?” আইশাহ-র প্রশ্নবাণ চলতে থাকে।
এমন নয় যে আইশাহ এই প্রথম বাঙ্কার দেখছে, কিম্বা সৈন্য। এড়াবেই বা কী করে, কাশ্মীরে অলিতে গলিতে তো তারা সদা উপস্থিত।
যদিও এই প্রথম, ঠিক ওর রোজকার স্কুল পথে একটা বাঙ্কার গজিয়ে উঠেছে।
গাড়ির হর্নে আমাদের কথোপকথনে ছেদ পড়ে, আমরা তখনও গোলকধাঁধা পেরোচ্ছি।
আমরা সোজা হেঁটে বাজারে আসি। ইতিমধ্যেই আমার মাথা ফিরতি পথের রুট হাতরাচ্ছে। অন্য কোনও রাস্তা থাকলে আমি সেই পথ ধরেই ফিরতে চাইতাম।
ফেরার পথে খেয়াল হলো, একজন সেনা আমাদের দিকে তাকিয়ে। সম্ভবত আমার ফিরানে ঢেকে রাখা হাত তাকে বিচলিত করেছে।
“ওরা রাঁধে কোথায়? খায় কী?” আইশাহর প্রশ্নের গাড়ি আবার ছুটতে থাকে। “ওদের বাড়ির লোক কোথায়?”
আমি খুব সাবধানে বলি, ওদের কাজ আমাদের ওপর নজর রাখা। বলি, ওরা অনেক অনেক দূর থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে, যে সমস্ত জায়গায় কাশ্মীরের থেকে অনেক বেশি গরম। ওরা এখানে এসেছে পেটের দায়ে। ইচ্ছে করেই জটিল খুঁটিনাটি বাদ দিই, বলি না এরকম কতজন কাশ্মীর উপত্যকায় রয়েছে, যাদের বাড়ির জন্য মন কেমন, পরিবারের জন্য মন খারাপ। বলি না, সেই বিষাদ এতটাই গভীর যে তাদের কেউ কেউ আত্মহত্যাও করে।
“আমরা যখন স্কুল বাসে এই ব্রিজটা দিয়ে যেতাম, তখন কিন্তু এই বাঙ্কারগুলো ছিল না এখানে,” আইশাহ বলে।
“মনে আছে যখন তোমাদের স্কুল বন্ধ হল, সেই যখন নওসিন (আইশাহ-র ছোট্ট বোন) সবে হল? তারপর লকডাউন হয়েছিল, সেই সময়ই এই বাঙ্কারগুলো ওরা বানিয়েছে,” উত্তর দিতে দিতে প্রার্থনা করি আর যেন কোনও প্রশ্ন না আসে।
বাঙ্কার…
আমার বাঙ্কার দেখার প্রথম স্মৃতি ১৯৯৪ সালের, আমি তখন প্রায় আইশাহ-রই বয়সী। ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্ট-এর কয়েকদিন আগে শ্রীনগরে ঝিলমের ধারটাকে দুর্গ বানিয়ে ফেলেছিল ওরা। একটা বাঙ্কার ছিল ঠিক আমার বাড়ির পাশে।
সশস্ত্র বাহিনীর লোকেরা চট আর সিমেন্টের ফাঁকা বস্তার ভিতর মাটি আর বালি ভরে সেগুলো দিয়ে চার দেওয়াল গড়ে তোলে: ভিতরে একজন কী বড়জোর দুজন সেনার জায়গা। বাঙ্কারে সবসময়ই কাঁধের উচ্চতায় একটা ছোট্ট ফুটো থাকে: “জানালাবিহীন জানালা”, বন্দুকের নল তাক করার জন্য।
ফুটো দিয়ে ভিতরে থাকা সেপাইকে এক ঝলক দেখা যায় – তার থেকে বেশি তাকালেই সে ক্ষেপে যেত – সোজা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকত আমাদের দিকে। আমার তখন বয়স আট, আর সে বছর শ্রীনগরের জিরো ব্রিজ থেকে আমিরা কদলের মধ্যের কিলোমিটার খানেক দূরত্বে তৈরি বাঙ্কারের সংখ্যা ছিল আটের বেশি ।
ভারত আমার মাথায় এই স্মৃতি গেঁথে দেওয়ার কয়েক দশক পর আইশাহ বাঙ্কার নিয়ে জানতে চাইছে। সেই এক বালিতে ভরা বস্তা, সেই “জানালাবিহীন জানালা,” সেই বন্দুকের নল আর তীক্ষ্ণ একজোড়া চোখ সোজা আমাদের দিকে তাকিয়ে, ঠিক যেমন তাকিয়ে ছিল ২৬ বছর আগে।
৫ আগস্ট, ২০১৯, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে কাশ্মীরকে দুটো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার সপ্তাহ কয়েক আগে থেকেই ভারত রাষ্ট্র, তাদের বহাল করা রাজ্যপাল আর হাজার হাজার সশস্ত্রবাহিনী দিয়ে কাশ্মীরকে প্রস্তুত করছিল তার সবথেকে বড় ধাক্কার জন্য।
ভারতের এই সিদ্ধান্তের পরেই লাগু হয় সেই কার্ফিউ, কাশ্মীরের ইতিহাসের অন্যতম সবথেকে ভয়াবহ কার্ফিউ। ফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাশ্মীরের রাস্তা থিকথিক করে সশস্ত্রবাহিনীতে, এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ওঠা যে কোনও স্বরকে পিষে মারতে বদ্ধপরিকর ছিল ভারত।
অবরোধ শুরুর বেশ কয়েক সপ্তাহ আগেই আমরা আরও আরও সেনা মোতায়েন হতে দেখি। সরকারি দফতরগুলোর কাছে অদ্ভুত নির্দেশ আসে জিনিস মজুদ করার আর পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়ার। ভারতের সংসদ এক তরফাভাবে কলমের এক খোঁচায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ মানুষের ভবিষ্যত নির্ধারিত করে দেওয়ার আগে থেকেই ভয় ও অনিশ্চয়তা গ্রাস করতে শুরু করেছিল উপত্যকাকে।
এই টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই আমার বাড়ির বাইরে বাঙ্কার তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় আধাসেনা।
কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদা হারানোর পর থেকে আইশাহ বাড়িতেই। কোভিড-১৯ মার্চ ২০২০ তে পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দেওয়ার আট মাস আগে থেকে চলছে আমাদের লকডাউন।
ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন শেষ হয়ে গেলেই ঝিলমের তীরের বাঙ্কারগুলো খুলে ফেলা হত, এই বাঙ্কারগুলো আর ভাঙা হয় না। আগস্ট ২০১৯-এর পর অনেক সপ্তাহ ধরে আমরা ভেবেছি আধাসেনা হয়তো এইবার এই বাঙ্কারগুলো ছেড়ে তাদের মূল শিবিরে ফিরে যাবে। পরিবর্তে, তারা রাস্তার দুপাশের সিংহভাগ দখল করে বসেছে। এর ঠিক কোণাকুণি তৈরি হয়েছে আরেকটা বাঙ্কার, এবং আরও একটা, ছোট, প্রথমটার ঠিক উল্টো দিকে।
ব্রিজের প্রান্তে, মেহজুর নগর (যেখানে আমরা থাকি) আর জওহর নগরের (যেখানে আইশার প্রিয় স্টেশনারি দোকান) সংযোগস্থলের মোড়টা এখন পুরোপুরি সেনাবাহিনীর দখলে। ধাতব ব্যারিকেড আর পেঁচালো কাঁটাতারে ভরা রাস্তা পুরো জায়গাটাকে একটা ভয়াবহ গোলকধাঁধায় পরিণত করেছে, যেখান দিয়ে খুব সতর্ক হয়ে পা টিপে টিপে যেতে হয়।
দিনরাত সেখানে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে প্রহরীরা উপস্থিত, পায়ে হাঁটা মানুষ বা গাড়ি, সব রকমের যাতায়াতের ওপর তাদের কড়া নজর। শুধু আমার বাড়ির সামনেই না। গোটা কাশ্মীর জুড়ে, যেখানেই কেউ যাক, আগস্ট ২০১৯ এর পর থেকে অতিরিক্ত সেনার উপস্থিতি চোখে পড়বেই।
ভারতে প্রশাসন একদিকে দাবি করছে অতিরিক্ত সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, কাশ্মীরের বাস্তব চিত্র কিন্তু অন্য কথা বলছে। প্রতিটা কোণায় সেনার আনাগোনা, কাশ্মীরের কোনও রাস্তায় হাঁটবেন আর মিলিটারির লোক দেখবেন না এ অসম্ভব। দেহ তল্লাশি, স্মার্ট ফোন পরীক্ষা, “এরিয়া ডমিনেশন এক্সারসাইজ” (সেনাবাহিনী একটা এলাকা পুরো ছেয়ে ফেলে, প্রতিটি ঢোকা বেরনোর পথ আটকে দিয়ে) এখানে নিত্যকার ব্যাপার।
আর তারপর, বাঙ্কার।
গত একবছরে, যখনই আইশাহ আমার সঙ্গে বেরোয়ে, একই প্রশ্ন করতে থাকে।
উত্তরগুলো আপাতভাবে সহজ।
কিন্তু, একজন বাবা হিসেবে আমি জানি না আমার ন’বছরের মেয়েকে আমি কী করে দমন, নিয়ন্ত্রণ, সামরিক দখলদারি আর প্রোপাগ্যান্ডার মানে বোঝাবো। কীভাবে ব্যাখ্যা করব নিপীড়ন কাকে বলে? কোথা থেকে শুরু করব? কীভাবে জানাবো সেই ইতিহাস যা কোনও দিনও সে তার স্কুল পাঠ্যে পড়বে না?
তবে এই প্রশ্নগুলো আমার মাথায় আসার আগে আমি নিজেকে প্রশ্ন করি: আমি কি আদৌ ওকে জানতে দিতে চাই?
যেকোনও বাবা-মা-ই কি তার সন্তানকে সেই অতীত থেকে আড়াল করে রাখতে চাইবে না, যেখানে শুধুই গণহত্যা, নির্যাতন, গুম হয়ে যাওয়া আর সার সার কবর? আমি কি সত্যিই আমার সন্তানের সামনে এই সমষ্টিগত যন্ত্রণার কোলাজের ঝাঁপি খুলতে চাই?
এইসব প্রশ্ন যখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, আমার বন্ধু ও সহকর্মী মহম্মদ ইউনিস তার ফেসবুক পেজ-এ লেখে:
“সংঘর্ষের সঙ্গে প্রথম পরিচিতি ঘটে গেল হামাদের। গতকাল, মাঝরাতে বাড়ির দরজা-জানলায় বাড়ি পড়ার শব্দে ঘুম ভাঙে ওর। যে ঘরে ও ঘুমোচ্ছিল সেখানে বাবা-মায়ের (তাদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়) বদলে এক দঙ্গল ভারতীয় সেনাকে দেখে ভয় চিৎকার করে কেঁদে ওঠে হামাদ, বহু ঘন্টা সে কান্না থামেনি। হামাদ, দুইবছরের হামাদ। কী যে আদৌ ঘটছে তা ওকে বোঝানো কঠিন। ”
হামাদ ইউনিসের ভাইপো। ওরা পুলওয়ামাতে থাকে, বহু বহু বাঙ্কারে ভরা জেলা পুলওয়ামা। যে জেলায়, সেনার কর্ডন আর খানাতল্লাশি – দিনে ও রাতে- সাধারণ ঘটনা।
বাঙ্কারের অস্তিত্ব, মাঝরাতের হানা শিশুর কাছে কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায় – কোথা থেকে শুরু করতে হয়?
৯০-এর দশকে – কাশ্মীরের ইতিহাসের অন্যতম সবথেকে রক্তাক্ত সময়ে বেড়ে ওঠা শিশু হিসেবে, অত্যাচার, গুলি, শহীদ, বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স), গ্রেনেড বিস্ফোরণ ইত্যাদি শব্দগুলোর সঙ্গে, স্কুলে শেখানো ইংরেজি বর্ণমালার মতোই সহজে পরিচিত হয়ে গেছিলাম আমরা।
আমার ছোটবেলার স্মৃতি জুড়ে রয়েছে ভেসে যাওয়া শব, মানসিক-ভারসাম্যহীন ছেলে- আমার সাথে দেখা হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারতীয় সেনা যাকে গুলি করে মারে, আমার ক্রিকেট খেলার রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা মানুষের থেঁতলানো ঘিলু, আমার বড় দাদার মার খাওয়া মুখ, যাকে তার মায়ের সামনেই ইলেকট্রিক শক দেয় সেনা। আমার স্মৃতিতে রয়েছে খবরের কাগজের পাতা ভর্তি গুলিবিদ্ধ কাশ্মিরীদের ছবি। আমার কাছে, সেই সময়ে, উপত্যকায় ভারতের নিয়ন্ত্রণের সংজ্ঞা ছিল অত্যাচার আর হত্যা।
কয়েক দশক পর, পরিস্থিতি একই, যদিও আজকাল ভারত রাষ্ট্র তাদের কার্যকলাপে কিঞ্চিত “কূটনীতির” ছোঁয়া আনার চেষ্টা চালাচ্ছে খুব।
এনকাউন্টার আর মৃত্যু যখন আজও আমাদের বাস্তবতা, পাশাপাশিই আমরা পেয়েছি গুলমার্গের ঝকঝকে বরফের ঢালে মোতায়েন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমর্থনে নাচা, রেড কার্পেটে হাঁটা বলিউড তারকাদের। আমরা পেয়েছি ক্রিসমাসে সান্টা সাজা সেনা। আমরা দেখেছি, আরও একবার বিদেশী প্রতিনিধিদলের “ভূস্বর্গ” কাশ্মীরে গাইডেড ট্যুর-এ আসা।
প্রতিনিধিদল শ্রীনগরে পৌঁছনো কয়েকদিন আগে কয়েকটি বাঙ্কার ভেঙে দেওয়া হয়, তৈরি হয় “দয়ার পাঁচিল”। এই ধরনের লোক দেখানো কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় প্রশাসন কীভাবে কাশ্মীরের বাস্তবতাকে গুলিয়ে দিতে চায় তারই উদাহরণ হয়ে থাকে এই প্রতিটি ঘটনা।
আর, আইশাহ স্কুল যাওয়ার পথের বাঙ্কার-এর সেনার মতোই তীক্ষ্ণ চোখে বিদ্ধ করে চলে আমাদের বাস্তবতা।
আইশাহ আবার স্কুল যেতে শুরু করলে, বাঙ্কারগুলোই তার কাছে হয়ে উঠবে নতুন স্বাভাবিকতা, নিউ নর্ম্যাল। স্কুলে হয়তো সে ভারতীয় ইতিহাসই শিখবে, কিন্তু শেষ অবধি, সেই ইতিহাস সে জেনেই যাবে যে ইতিহাস তার জানার কথা। বাঙ্কার সেখানে একটা পরিচ্ছেদ।
আমি যতই আড়াল করে সূক্ষ্ণভাবে আমার উত্তর সাজাই না কেন, আমি জানি বাস্তব তার কাছে লুকনো থাকবে না; সে জানবেই, আজ বা কাল। ঠিক যেভাবে আমি জেনেছিলাম, আইশাহ-র বয়সে, যখন আমি প্রশ্ন করতে শুরু করেছিলাম। ঠিক যেভাবে কাশ্মীরে বড় হওয়া প্রতিটি শিশু জেনে যায়।
ছবি – মাসরাত জাহরা