সিংহাসনে বসল রাণী, বাজল কাঁসর ঘন্টা
ছটফটিয়ে উঠল কেন মন্ত্রীছুঁড়ির মনটা?
রাণী বলেন, মন্ত্রীসোনা, জামায় কিসের গন্ধ?
মন্ত্রী বলেন, এসেন্স দিছি, গন্ধ তো নয় মন্দ!
রাণী বলেন, মন্দ? ও মা – তাই কি আমি বললাম?
একটু কাছে এলে বরং ভালো করেই শুঁকতাম।
মন্ত্রীছুঁড়ি তাই না শুনে খুশির চোটে এক পাক
চুলবুলিয়ে নিলেন নেচে তাধিন তাধিন ধিন তাক।
রাণী হাসেন খিলখিলিয়ে, হাততালি দেন জোরদার,
সভায় শুরু কানাকানি বেজায় রকম সোচ্চার-
উজির নাজির সেনাপতি সবাই ছিলেন সভায়
কুঁচকে ভুরু উসখুসিয়ে উঠলেন তাঁরা সবাই।
মন্ত্রী নাচেন সভার মাঝে – এ আবার কী উৎপাত?
রাণী তাতে হাততালি দেন – কী ভয়ানক বিভ্রাট!
রাণীর দাদা চন্দ্রকেতু আর না পেরে শেষটা
শাসন করে বলেন, রাণী – শালীনতার চেষ্টা
তুমিই যদি শিকেয় তোলো, প্রজারা কী শিখবে?
পণ্ডিতেরা তোমায় নিয়ে কী বইটা বা লিখবে!
একটু থেমে রাণী বলেন – হাসলে যদি দোষ হয়
প্রজারা বা কেমন করে থাকবে তবে নির্ভয়?
আজকে আমি সভার মাঝেই বলছি খুলে সবটা
হয়তো তাতেই শান্ত হবে বেজায় কলরবটা।
উজির, নাজির, সেনাপতি, পণ্ডিতরা, দাদা,
সব সভাসদ, প্রজারা সব – খোলসা করি ধাঁধাঁ –
ভালোবাসি মন্ত্রীকে, তাই নাচ দেখে তার খুশি
এবং সেটা স্বীকার করায় নেইকো কোনো দোষই।
মন্ত্রীসোনাও ভালোবাসে এই আমাকেই, জানবেন
এবার তবে আপনারা সব আশা করি থামবেন।
সব সভাসদ নীরব, নিথর – ছুঁচ পড়লেও শব্দ –
ভাবছে সবাই কেমন করে করবে এদের জব্দ।
আবারও সেই চন্দ্রকেতুই সামাল দিলেন শেষটা –
বলেন তিনি, চালাচ্ছে তো ভালোই এরা দেশটা
দুই মেয়েতে প্রেম করছে – এমন বড় হয় না –
কিন্তু কাজে নিখুঁত যখন, চুপ কি থাকা যায় না?
খুব যে সবাই খুশি হল, নয়কো দাবি তেমন –
হয়নি তবে অন্ধবিচার, আজকে দেশে যেমন।
অকুন্ঠ ঋণস্বীকারঃ সুকুমার রায়
কবিতাটি স্যাফো ফর ইকুয়ালিটির “গোলমেলে গল্প” বইয়ে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রথম প্রকাশঃ বইমেলা ২০১৯