

জসিন্তা কেরকেট্টা পশ্চিম সিংভূমের ওঁরাও আদিবাসী সম্প্রদায়ের কবি, লেখিকা এবং সাংবাদিক। মূলত হিন্দীভাষায় লেখা জসিন্তার কবিতায় আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন দিক দেখতে পাওয়া যায়। উচ্ছেদ, পরিবেশ, আদিবাসী সমাজের লড়াই থেকে ব্যক্তিজীবনের নানান ওঠাপড়া জসিন্তার কবিতায় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ‘আঙ্গোর’ এবং ‘জড়ো কি জমিন’ নামে হিন্দী-ইংরাজি দ্বিভাষিক দুটি কবিতার সংকলন আছে জসিন্তার।
গঢ়চিরোলি। সিলগেরে। বস্তার। ভারতবর্ষের মানচিত্রের সেই সমস্ত অঞ্চল যার নাম শুধুমাত্র উঠে আসে রক্তভূমি হিসেবে। যেখানে যেকোনো সময় কারণে অকারণে এনকাউন্টার করে দেওয়া যায়। যেখানে শুধুমাত্র কারো রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য তাকে ধর্ষণ করা যায়, বুকে বুলেট পুড়ে দেওয়া যায়। সেই বস্তার যার চিত্র ফুটে ওঠে সোনি সোরির অ্যাসিড আক্রান্ত মুখে। সেই গঢ়চিরোলি যেখানে ২০১৮-এ ৩৭ জন আদিবাসী মানুষের রক্তের দাগ না শুকোতেই আবারও ১৩ জন মানুষ লাশ হয়ে যান দেশপ্রেমের নামে। সেই সিলগেরে যেখানে উন্নয়নের নামে মিলিটারি ক্যাম্প করে তিন তিনটে তরতাজা প্রাণ লাশ করে দেওয়া যায়। সেই বস্তার যেখানে আদিবাসী মেয়েদের বুক টিপে বুঝে নেওয়া যায় তার রাজনৈতিক পরিচয়, যেখানে আদিবাসী মেয়েদের মাওবাদী বলে ধর্ষণ করা যায়। যেখানে শুধুমাত্র মিলিটারি ক্যাম্পের প্রতিরোধ করলে গ্রামে গুলি চলে। সেই গঢ়চিরোলি, সিলগেরে, বস্তার, সুকমা। যেখানে গানপয়েন্টের উন্নয়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় মানুষ। যেখানে সিলগেরেতে ক্যাম্প হলে গুলি চললে, সুকমা, বিজাপুর থেকে হাজারে হাজারে মানুষ পায়ে হেঁটে এসে অবস্থান করে। যেখানে রাষ্ট্রের জল, জঙ্গল, জমিন মাইনিং কোম্পানিকে বেচে দেওয়ার চক্রান্ত থমকে যায় আদিবাসী মানুষদের জান কবুল লড়াইয়ে। বারবার। তাই সেখানে গানপয়েন্টে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হয় গাঁয় গুলি চালিয়ে, ধর্ষণ করে। কিন্তু বিরসা মুন্ডা, ফুলো মুর্মুরা সেখানে ব্যারিকেড হয়ে যান। বারবার। গাঁয় গুলি চললেও মুক্তির স্বপ্নের মৃত্যু হয় না যে…
গাঁ রাত্তিরে বিছানায় শুয়ে পড়ে
কিন্তু ওর ঘুমের সাথে
এখন কোনো স্বপ্ন নেই
গত রাত্রে সব স্বপ্নকে বন্দী করে
জেলে ভরা হয়েছে
যেখানে স্বপ্ন গজানোর সম্ভাবনা ছিলো
সেখানে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে ছাউনি
দিন আর রাত অদ্ভুত আতঙ্কে কাটাচ্ছে
গাঁয়ের আদিবাসী ছেলে
কখনো স্বপ্ন দেখতো নিজের মাটিকে সেবা করার
মাঝরাতে জেগে উঠে
এখন স্বপ্নে দেখে ঘাতক বন্দুকেরা
ওর নিদ্রা ভরে আছে
অনেক দুর্ঘটনার স্মৃতিতে
মাঝরাতে ও জেগে উঠে
নিজের মুখ মোছে
থেকে থেকে যেন মনে হয়
কেউ যেন বন্দুকের কুঁদো ওর চোয়ালে গুঁজে দিয়েছে
আর রক্তে ভেজা ওর সমস্ত দাঁত
ওর হাতের তালুতে এসে পড়েছে
মাঝরাতে জেগে উঠে
নিজের পা ছুঁয়ে দেখে
কোনো গুলি ঢুকে আছে নাকি?
এখন বার বার ওর এ রকম লাগে
ওই দিন চোট খেয়ে পড়ে যাওয়া
পালাতে না পারা আধমরা বিরসাকে দেখে কেমন
ওই লোকটা প্রথমে চারদিক দেখলো
আর কাউকে না দেখে চুপচাপ
তিনটে গুলি ঢুকিয়ে দিলো ওর বুকে
দ্বিতীয় বিরসা, যার পায়ে লেগেছিলো গুলি
ঝোপের মধ্যে চুপচাপ পড়ে রইলো শ্বাস বন্ধ করে
আজও কাগজের পুরিয়ার মধ্যে ওই গুলিটা লুকিয়ে
ও ঘুরে ঘুরে শ্রান্ত হয়ে দেখায়
দেখো, এই সেই প্রমাণ যা বলছে
যে আসলে কোনো গাঁয়ের ওপর
সবচেয়ে প্রথম গুলিটা কে চালায়?
চিত্রঋণ আনখ সমুদ্দুর